সালেহা বেগম রুনু। গত বছর স্বামীর মৃত্যুর পর ৯ বছরের মেয়েকে নিয়ে পড়েছিলেন বেশ বিপাকে। ছিল না রুটি রুজির নিশ্চয়তা। অনেকটা বাধ্য হয়েই জমিয়ে রাখা স্বল্প পুঁজিতে শুরু করেন বøক-বাটিক, হ্যান্ডি ক্রাফটের কাজ।
রাজশাহীর আল-আমিন ফ্যাশানের সত্বাধিকারী সালেহা বেগম রুনু বলেন, হটাৎ করে করোনা ভাইরাস চলে আসার কারণে, আমার পুঁজি যা ছিলো আমি সম্পূর্ণ বসে থাকায় খরচ হয়ে গেছে। মানে এখন আমার পুঁজিটা টোটালি নাই। না থাকার কারণে ব্যবসাটা এখন সেভাবে করতে পারছি না। খুবই প্রবলেম হচ্ছে।
রাজশাহীর একজন সফল নারী উদ্যোক্তা নিলুফার ইয়াসমিন। করোনা সংক্রমণ রোধে সরকারের ঘোষিত সাধারণ ছুটি চলাকালিন এমব্রয়ডারি, সেলাইসহ হাতের কাজের সব অর্ডার বাতিল হওয়ায় বন্ধ হওয়ার জোগাড় তার কারখানা। এতে তার প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট অন্তত শতাধিক নারী কর্মী হয়েছেন বেকার।
এস এন ফ্যাশানের কর্মী মোসাঃ কাকলি বলেন, কতদিনে স্বাভাবিক হবে সেটা তো আমরা জানিনা। কবে এই পরিস্থিতি ঠিক হবে। আপাও ঠিকমত বেতন ক্লিয়ার করতে পারছেন না পরিস্থিতির কারণে। এই জন্য আমাদের খুব কষ্টই হচ্ছে। করোনার কারণে আমরা খুব কষ্টতেই আছি।
উইম্যান বিজনেস চেম্বারের তথ্য মতে সালেহা বেগম কিংবা নিলুফাই নন। রাজশাহীতে তাদের মত বিভিন্ন কুটির শিল্পের হাজার খানিক নারী উদ্যোক্তার একই হাল। করোনাকালে সাধারণ ছুটি চলাকালিন সময়েই দু’টি ঈদ, পুজা, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি না হওয়ায় সেগুলো এখনো মজুদ কারখানায়। মুলধন আটকে যাওয়ায় পথে বসার অবস্থা নারী উদ্যোক্তাদের। এরই মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও বেশির ভাগেরই চলছে টিকে থাকার লড়াই।
এস এন ফ্যাশানের সত্বাধিকারী নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, হিউজ পরিমাণ প্রডাক্ট পহেলা বৈশাখের জন্য এবং ঈদের জন্য প্রডাকশন হচ্ছিল। তার মধ্যে তো হঠাৎ করে সবকিছুই বন্ধ হয়ে গেলো। ৩ মাস বন্ধ থাকাতে আমরা আসলে অনেক বড় লসে পড়েছি। যাতে আমাদের প্রচুর প্রডাক্ট স্টক থেকে গেছে। প্রডাক্ট উৎপাদন করবো, আবার প্রডাক্ট নিয়ে আসবো এই তো চলতে থাকে। কিন্তু এক্ষেত্রে যেটা হয়েছে যে, সেল যখন বন্ধ হয়ে যায় তাহলে তো আমার পুরো টাকাটাই সেখানে আটকে যাচ্ছে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো নারী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও সংকট মোকাবেলার এমনই তথ্য দিচ্ছেন।
স্বল্প বিনিয়োগে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে একটু একটু করে ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টায় থাকা এই উদ্যোক্তাদের অবস্থা উত্তোরণে ব্যাংকের ঋণ পেতে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিচ্ছেন উইম্যান বিজনেস চেম্বারের এই নেত্রী
রাজশাহীর উইম্যান বিজনেস চেম্বার অব কমার্স সভাপতি রোজিটি নাজনিন বলেন, একটা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে ব্যাংকের লোন পাওয়ার জন্য। অর্থাৎ ব্যাংকের যে লোনটা পাওয়ার কথা নারী উদ্যোক্তাদের, সেটা যেন পাই সেটার জন্য সব রকম সহযোগিতা, ব্যাংকে যাওয়া থেকে শুরু করে ফর্ম ফিলআপ থেকে শুরু করে তাদের সব রকম চেষ্টাই আমরা করে দিচ্ছি।
নারী উদ্যোক্তাদের আটকে থাকা পণ্য দ্রুত বিপণনের সহায়তার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নেতারা।
রাজশাহীর চেম্বার অব কমার্সের সচিব মোঃ গোলাম জাকির হোসেন বলেন, যে সকল প্রডাকশনগুলো তাদের হয়ে আছে সেগুলো যেন বিক্রির জন্য সরকার একটা সহায়তা দেয়। এবং একটা সুযোগ সৃষ্টি করে, একটা পরিবেশ তৈরি করে যেন এসব ছোট ছোট নারী উদ্যোক্তারা যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
রাজশাহী উইম্যান বিজনেস চেম্বার অব কমার্সের তথ্য বলছে, ক্ষতিগ্রস্থ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সরকারি প্রণোদনা পেতে দেড় শতাধিক নারী উদ্যোক্তার নাম প্রস্তাব করেছে রাজশাহী উইম্যান বিজনেস চেম্বার। আর প্রনোদনা ও ঋণ পেতে সহায়তা করছে চেম্বার অব কমার্স রাজশাহী।