কোনো শিশুর জন্মের পর আর্শিবাদের নামে গান-বাজনা করে টাকা নেয়ার এই প্রক্রিয়াকে তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়ারা বলেন বাদাই। আর এটাই বাংলাদেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীর প্রধান আয়ের উৎস। করোনা পরিস্থিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বের হচ্ছেন ঠিকই কিন্তু কোনো বাড়িতে ঢুকতে পারছেন না তারা। ফলে তাদের আয় নেমেছে শূন্যের কোটায়।
হিজড়া: চাচা গেইট খোলো!
বাড়িওয়ালা: এখন করোনার সময়। বাইরের মানুষ ঢুকতে দেয়া যাবে না। আপনারা পরে আসেন
হিজড়া: চাচা করোনার সময় যদি আমরা ঢুকতে না পারি, আমরা কি করে খাবো চাচা?
এর বাইরে ছল্লা নামে রাস্তাঘাটে বিভিন্ন ব্যক্তি বা দোকানপাট থেকে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকেও অর্থ সাহায্য নেন তারা। সেখানেও কমেছে উপার্জন। এর মাঝে শীতে করোনার দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণের শঙ্কা বাড়িয়েছে উদ্বেগ।
আমরা কিছু ত্রাণ পেয়েছিলাম। এগুলো দিয়ে আমাদের কোনরকম চলেছে। কিন্তু সম্পূর্ণভাবে তো চলেনি।
আসলে আমরা তো কাজে যেতে পারিনি। এখন বাড়িওয়ালা ভাড়ার জন্য বলছে, ঘর ছেড়ে দাও, অন্য কোথাও যাও। এখন আমরা কোথায় যাবো?
বাসা যদি তারা ছেড়েও দেয়, অন্য কোন বাসা তাদের ভাড়া দিচ্ছে না। এটা একটা প্রবলেম।
হিজড়াদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, সরকার ও বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংগঠন থেকে কিছু অর্থ ও খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। তবে, সঞ্চয় ও বিকল্প কর্মহীন এই জনগোষ্ঠির জন্য তা পর্যাপ্ত নয়। মূলধারায় তাদের যুক্ত করতে কর্মমুখী প্রশিক্ষণ দেয়া হলেও সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে তৈরি হচ্ছে না উদ্যোক্তা।
রাজশাহীর আলো হিজড়া সংঘের সভাপতি মিস মোহনা বলেন, আমাদের লোকগুলোকে বিভিন্নভাবে ট্রেনিং করে, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এটা করলে হইতো আমরাই আমাদের লোকগুলোকে সহায়তা করতে পাবরো। আমাদের কারোই তেমন এবিলিটি নাই যে, একজন আরেকজনের সহযোগিতা করবো।
লাইট হাউজের প্রধান নির্বাহী হারুন-অর-রশিদ বলেন, এই জনগোষ্ঠীই আমাদের বিউটি। এটা ড্রাইভারসাইড পপিউলেশন আমাদের আছে। আমাদের তাদেরকে থাকতে দিতে হবে। তাদের স্বীকৃতি আমাদের দিয়েছে, তাদের লাইবেলিটি আমাদের নিতে হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, উদ্যোক্তা তৈরিতে লকডাউন প্রত্যাহারের পর আবারও হিজড়াদের বিভিন্ন কর্মমুখী প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। করোনাকালে নিয়মিত ভাতা দেয়া হয়েছে বয়স্ক ও শিক্ষার্থী হিজড়াদের।
রাজশাহীর বিভাগীয় সমাজ সেবা অফিসের পরিচালক এ কে এম সারোয়ার জাহান বলেন, একটি মোটিভেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে, একটা সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসার জন্য। আমার বিভিন্ন প্রকার বিউটিশিয়ান প্রশিক্ষণ, সেলাই প্রশিক্ষণ, সেলাই মেশিন বিতরণ, গবাদিপশু পালনের বিষয়ে আমরা সহযোগিতা করছি। কম্পিউটার প্রশিক্ষণের উপরে জোর দেয়া হয়েছে।
২০১৩ সালে হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। এরফলে করোনা মহামারীকালে হিজড়া জনগোষ্ঠীর মানুষদের উপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। এ সময়ে হিজড়া জনগোষ্ঠীর মানুষদের সরকারী বা বেসরকারীভাবে খুব বেশী সহায়তা করা হয়নি। ফলে তাদের এই দূর্যোগের সময় কাটাতে হচ্ছে মানবেতর জীবন।