করোনা সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ইমামদের ভূমিকা প্রশংসনীয়

ধর্ম এমন একটি বিষয় যা আপনাকে করে ফেলতে পারে সংবেদনশীল। অনেকেই ধর্মের দোহায় দিয়ে মানতে নারাজ সামাজিক দুরত্ব ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি।

আর তাই এই মহামারীর শুরু থেকেই সাধারণ মানুষকে ধর্মের ভুল ব্যাখ্যায় মতাদর্শি না হয়ে ধর্মের সঠিক ব্যাখ্যায় জীবনকে গোছানোর পরামর্শ দিচ্ছেন ধর্মীয় নেতা ও মসজিদের ইমামরা।

রাজশাহীর পবা উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মোঃ গোলাম মাওলা বলেন, যখন থেকে করোনা মহামরী বিশ্বে দেখা দিয়েছে, তখন থেকেই আমরা দুরত্ব বজায় রেখেই সালাত আদায় করি। এবং আমাদের মসজিদের বাইরে ওজুখানাতে সাবান ও হ্যান্ডওয়াসের ব্যবস্থা রেখেছি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা ফাহিম মাহমুদ বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদ সেনিটাইজেশন করা, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে মুসল্লিদের আগমনের পূর্বে জীবানুনাশক স্প্রে করা, সাবান রাখা, এগুলো আমরা ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয়েছি। এখনো করে চলেছি। আর সবচেয়ে যেটি বড় কথা সেটি হলো, সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে আমরা নামাজ আদায় করেছি এবং এখনো করে যাচ্ছি।

মসজিদে নামাজ আদায়ে সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব মানার পাশাপাশি জীবনযাপনে যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই প্রকৃত ধর্মভীরূর কাজ তা বোঝানোর চেষ্টা অব্যহত রেখেছেন ইমামগণ।

“আমরা বাহিরে যখন বের হবো, তখন আমরা অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলবো। আমরা মাস্ক ব্যবহার করবো। আমরা মসজিদে যেমন দুরত্ব বজায় রেখে সালাত আদায় করছি, আমরা বাজার-ঘাটে যেখানেই যায় না কেন সেখানেই আমরা এমন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবো।“

সাধারণ মানুষও তাদের ভ্রান্ত ধারণা থেকে বের হয়ে শুরু করেছেন সচেতন হওয়া। মানছেন সামাজিক দূরত্ব।

“ইমামরা আমাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ পড়তে বলছে। শুধু মসজিদেই না, বাহিরেও আমাদের দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করতে বলছে। এবং আমরাও তা মানার চেষ্টা করছি।“

“নির্দেশনাও আছে যে হাত ধোয়া, মাস্ক পড়া, এগুলাও ইমাম সাহেবেরা বলেন।“

“এখন আমরা মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই নামাজ আদায় করছি। মাঝখানে তো ইমামরা বলে দিয়েছিলো বাসায় নামাজ আদায় করার জন্য। কিন্তু আমরা আবার মসজিদে ফিরে আসছি। এখন প্রতি ওয়াক্তে ইমামরা সচেতনতার জন্য কিছু না বললেও শুক্রবারে নামাজের আগে সচেতনতা তৈরীর জন্য তারা অনেক কিছু বলে থাকেন।“

ইমামগণ বলছেন এই ক্রান্তিকালীন সময়ে মানুষকে নবী-রাসুলদের জীবনি থেকে মহামারি বা যেকোন বিপদে নিজেকে সচেতন হবার পরামর্শ দিচ্ছেন।

রাজশাহীর পবা উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মোঃ গোলাম মাওলা বলেন, মহানবী (সাঃ)-এর একটা হাদিস আছে যে, তোমরা যেখানে মহামারী দেখা দেয় সেখান থেকে পলায়ন করো না। আর নতুন করে সেখানে কেউ যেও না। এটাই তো শতর্কতা বহন করে। যদি মাস্ক কেউ ব্যবহার না করে, তবে এটা তার অনেকখানি বুঝের অভাবের কারণে সে এটা করতে পারে। আমরা সতর্ক করি যে, মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বলা হচ্ছে, মানুষ যেন ধর্মের ভুল ব্যাখ্যায় এই মহামরিতে নিজেকে মৃত্যুর পথে না ঠেলে দেয় সেজন্য ইমামদের দেয়া হয়েছে নির্দেশ। বলা হয়েছে, যার যার জায়গা থেকে মুসল্লিদের সচেতন করতে।

রাজশাহীর ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমীর উপ-পরিচালক ডা: মোঃ আসেম আলী বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক সমস্যা করোনার জন্য আমরা ইমামদেরকে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকি। এজন্য এখানে একজন আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকেন। উনি এই বিষয়গুলো বলে থাকেন। ফিডব্যাক নেয়ার সময় দেখেছি, তারা গ্রামে গঞ্জে যায়। মসজিদে নামাজ শেষে কিংবা বিভিন্ন জমায়েতে বিশেষ করে বড় জমায়েতে জুম্মা শেষে তারা মুসল্লিদের মাঝে এসব কথা জোর দিয়ে বলছে।

অন্যদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন মনে করছে, এই সময়ে মসজিদের ইমামগণ ধর্মভীরু জনগণকে সচেতনে রাখতে পারে অনন্য ভূমিকা। সাধারণ মানুষ মসজিদ থেকেই পেতে পারে সচেতনতার পাঠ।

ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ জালাল আহমদ বলেন, ধর্মীয় অনেক কোরআন-হাদিসের আলোকে ইমামগণ কিন্তু ব্যাখ্যা করেছেন, আর জনগণও কিন্তু ইমামকে শ্রদ্ধা করে, ভালোবাসে। এই জন্য ইমামদের কথা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইমামদের কথা মানুষ শুনবে। এই জন্য সরকার চাচ্ছেন যে, সারা বাংলাদেশের যে মসজিদ আছে তা ইমামদের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব, এটা ইসলামে আছে।

যুগে যুগে মানুষ যেমন ধর্মের ভুল ব্যাখ্যায় বিপথগামী হয়েছে, আবার ধর্মীয় নেতাদের কাছ থেকে সঠিক ব্যাখ্যায় দীক্ষিত হয়ে হয়েছেন সচেতন, নতুন করে গড়েছেন জীবন। আর আজ করোনা মহামারীর এই সময়ে ইমামগণ যেন ধর্মীয় আদেশ মেনেই ভাইরাসের সাথে লড়াই করতে শেখাচ্ছে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের।

সহায়তায়: ইউনিসেফ

CCD Bangladesh © 2024 All Rights Reserved.