অভাব অনটনে কাটছে রবিদাস জনগোষ্ঠির জীবন!

রাজশাহীর একটি ক্লিনিকের পরিচ্ছন্নকর্মী রিতা রবিদাস। দেশে করোনার প্রকোপ শুরুর পর কর্মী ছাঁটাইয়ের অজুহাতে বেশ কিছুদিন বেকার থাকেন তিনি। পরে আবারও যোগ দিয়েছেন কাজে। তবে বেতন দেয়া হয় আগের অর্ধেক।

যতগুলো স্টাফ ছিলাম, সেখান থেকে কম কম করে আমাদের ডাকলো। বললো, আমি তো এতো বেতন দিতে পারবো না, তাই ১০ জনের জায়গায় ৫ জন নিয়ে কাজ করবো।

রবিদাস সম্প্রদায়ের মূল পেশা জুতা তৈরি, সেলাই ও কালি করা। তবে এর বাইরেও পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ছাত্রাবাসে কাজ করেন অনেকে। তাদের অনেকের কমেছে উপার্জন। আর অভাবের সংসারে বেড়েছে নানা অশান্তি।

করোনার আগে ৭০০-৮০০ টাকার কাজ করতাম। করোনার পর থেকে ৪০০-৩০০ টাকার কাজ হয়। আবার কোনোদিন হচ্ছে আবার কোনোদিন কাজ হচ্ছে না।
এই লকডাউনের মধ্যে লোকজন জুতা পালিশ কম করছে। করোনার জন্য সবাই ভয় পাচ্ছে জুতার মধ্যে করোনা থাকে কিনা!
করোনার পর থেকে আমাদের সেই সমস্যা হয়েছে। এদিকে ভার্সিটিও বন্ধ, আমার স্বামী বসে আছে, আবার আমারও ইনকাম নাই। স্বামীরা ইনকাম করছে না বলে দু’কথা বললে রাগারাগি হচ্ছে।

মূল ধারায় আসতে লেখাপড়াকে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছে রবিদাস সম্প্রদায়ের বহু পরিবার। তবে করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় চিন্তিত তারা।

যদি এক বছর পিছিয়ে যায়, তখন তো চাকুরির মেয়াদটাও পিছিয়ে যাচ্ছে। এদিকে বয়স বাড়ছে কিন্তু চাকুরির বয়সসীমাটা আর থাকছে না।
এখন যেহেতু অনলাইন ভিত্তিক ক্লাস হচ্ছে, কিন্তু অনেক শিশুদের স্মার্ট ফোন নেই যে তারা অনলাইনে ক্লাস করবে।
বাসায় ইন্টারনেট নাই, তার ওপরে আমাদের মোবাইল ডাটা কেনার মতো টাকাও নেই।

অনগ্রসর এই জনগোষ্ঠিদের বয়স্ক ও শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ নিয়মিত ভাতা পেলেও করোনাকালে তাদের জন্য ছিল না বিশেষ কোনো বরাদ্দ।

রাজশাহীর বিভাগীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনিরা খাতুন বলেন, করোনাকালে তাদের জন্য বিশেষ কোনো বরাদ্দ তাদের জন্য আসেনি। আমাদের নিয়মিত যে বরাদ্দ সেটাই তাদের দেয়া হয়েছে। অনগ্রসর জনগোষ্ঠির বিশেষ ভাতা ৫০০ টাকা হারে প্রতি মাসে আর শিক্ষা উপবৃত্তি দেয়া হয়েছে।

দেশের প্রায় সব জেলায় রবিদাস জনগোষ্ঠির বসবাস। করোনা পরিস্থিতিতে তারা মানবেতর জীবনযাপন করেছেন। সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আবেদন জানিয়েছেন তারা।

CCD Bangladesh © 2024 All Rights Reserved.